আই টিভি বাংলা ডিজিটাল ডেস্ক:
মাদ্রাসাছাত্রী পাপিয়া আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে পাশের গ্রামের হোসাইনের। প্রেমের টানে বাড়ি ছেড়ে বিয়ে করেন তারা। নিকাহ্ রেজিস্ট্রি করা হলেও হোসাইনের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করা হয়।
স্বামী-স্ত্রী হিসাবে তিনমাস একত্রে বসবাস করার পর পাপিয়ার শরীরে ক্যান্সার দেখা দিলে চিকিৎসা করা সম্ভব না হওয়ায় তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাপিয়া মারা গেলেও তাকে হত্যার অভিযোগে হোসাইন ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে দাবি হোসাইনের স্বজনদের। পাপিয়া ও হোসাইনের বাড়ি নান্দাইল উপজেলায়।
নান্দাইল উপজেলার সিংরইল ইউপির নারায়নপুর গ্রামের আবু কালামের মেয়ে পাপিয়া আক্তার বাকচান্দা ফাজিল মাদ্রাসার দাখিল শ্রেণিতে অধ্যয়ণরত ছিল। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পাপিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে কচুরি চরপাড়া গ্রামের হানিফ মিয়ার ছেলে হোসাইনের। গত ৩০ মে দু’জন পালিয়ে গিয়ে কিশোরগঞ্জ নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে বিয়ে করেন। এর একদিন পর কাজীর মাধ্যমে নিকাহ রেজিস্ট্রিও করেন। বিষয়টি জানতে পেরে পাপিয়ার বাবা গ্রামের লোকজনের কাছে বিচার প্রার্থী হন। পরদিন গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে পাপিয়াকে তার বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু কয়েকদিন পর পাপিয়া পুনরায় পালিয়ে হোসাইনের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ চলে যায়। সেখানে একটি পোশাক কারখানায় কাজ নিয়ে বসবাস করতে থাকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আবু কালাম গত ২১ অক্টোবর ময়মনসিংহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে হোসাইনের নামে একটি অপহরণ ও মারধরের মামলা করেন। আদালত পিবিআইকে মামলাটির তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন।
শুক্রবার বাড়িতে গেলে হোসাইনের মামা আব্দুল আওয়াল ও নানী রোকেয়া বেগম জানান, নারায়ণগঞ্জ থাকাবস্থায় পাপিয়ার ক্যান্সার রোগটি পুনরায় দেখা দেয়। এ কারণে তার ডান চোখটি অস্বাভাবিকভাবে ফুলে বেড়িয়ে পড়ে। হোসাইনের পক্ষে এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব হবে না ভেবে আবু কালামের কাছে লোকজনের মাধ্যমে কিছু টাকা চায় সে। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকার করে পাপিয়াকে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে বলেন আবু কালাম। কথা অনুযায়ী গত ৬ সেপ্টেম্বর পাপিয়াকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তার বাবার বাড়ির সামনে দিয়ে আসে হোসাইন। বাবার বাড়িতে থাকা অবস্থায় গত ১৬ ডিসেম্বর মারা যায় পাপিয়া। পরে তার লাশ মর্গে পাঠানো হয়। কিন্তু পাপিয়াকে তার স্বামীর বাড়ির লোকজন অমানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করেছে অভিযোগ তুলে গত ১৯ ডিসেম্বর থানায় একটি মামলা করেন আবু কালাম। এ মামলায় হোসাইনসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।
অসুস্থ হয়ে বাবার বাড়িতে পাপিয়ার মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন স্থানীয় বাদল মিয়া ও রুহুল আমিনও। তবে পাপিয়ার বাবা আবু কালাম বলেন, তার মেয়ের পূর্বে ক্যান্সার কেন, কোনো রোগই ছিল না। হোসাইন এবং তার স্বজনদের নির্যাতনের কারণেই সে অসুস্থ হয় এবং তার ডান চোখটি নষ্ট হয়ে যায়। বাড়ি আনার পর মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখান থেকে নিয়ে যান ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে। সেখান থেকে পুনরায় ময়মনসিংহ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সর্বশেষে ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত ডেল্টা প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নিয়ে আসেন। গত ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে সে মারা যায়। তাই পাপিয়ার মৃত্যুর জন্য হোসাইন ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন তিনি।
ময়মনসিংহ জেলা বিএমএর সাবেক সভাপতি ডা. মতিউর রহমান ভূইয়া পাপিয়ার মস্তিষ্কের সিটিস্ক্যান ও বায়োপসি পরীক্ষার দুটি রিপোর্ট দেখে তার (পাপিয়ার) শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছিল বলে জানান। কিন্তু তার মৃত্যুর আসল কারণ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না দেখে বলা যাবে না।
নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ আহমেদ জানান, এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোট হাতে না আসা পর্যন্ত এটি হত্যা না ক্যান্সার সেটি বলা যাচ্ছে না।