আজ উপমহাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও সুরকার রুনা লায়লার জন্মদিন। ৭০ পেরিয়ে ৭১-এ পা রাখছেন তিনি।
উপমহাদেশের একজন কিংবদন্তি গায়িকা রুনা লায়লা। বাংলাদেশে তিনি চলচ্চিত্র, পপ ও আধুনিক সংগীতের জন্য বিখ্যাত। গজল গায়িকা হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তার সুনাম আছে। বাংলাদেশ স্বাধীনের আগে থেকেই তিনি চলচ্চিত্রের গায়িকা হিসাবে কাজ শুরু করেন। এছাড়া ভারতীয় এবং পাকিস্তানি চলচ্চিত্রের অনেক গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন।
রুনা লায়লা বাংলা, উর্দু, পাঞ্জাবি, হিন্দি, সিন্ধি, গুজরাটি, বেলুচি, পশতু, ফার্সি, আরবি, মালয়, নেপালি, জাপানি, স্পেনীয়, ফরাসি, ইতালীয় ও ইংরেজি ভাষাসহ মোট ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান করেছেন। তার ‘দমাদম মাস্ত কালান্দার’ গানটি পাকিস্তানে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
জীবন্ত সেই কিংবদন্তি গায়িকার জন্মদিন আজ শুক্রবার। ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন রুনা লায়লা। জীবনের ৭১টি বসন্ত পেরিয়ে ৭২ বছরে পা দিলেন তিনি। গায়িকার জন্মদিনে জেনে নিন তার সম্পর্কে খুটিনাটি।
রুনা লায়লার শৈশব কাটে পাকিস্তানের লাহোরে
রুনা লায়লার বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ আলী ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। মা আনিতা সেন ওরফে আমেনা লায়লা ছিলেন সংগীত শিল্পী। তার মামা সুবীর সেন ভারতের বিখ্যাত সংগীত শিল্পী। রুনা লায়লার যখন আড়াই বছর বয়স তখন তার বাবা রাজশাহী থেকে বদলী হয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতানে চলে যান। সেই সূত্রে তার শৈশব কাটে পাকিস্তানের লাহোরে।
সংগীত জীবন
১৯৬৬ সালে রুনা লায়লা উর্দু ভাষার ‘হাম দোনো’ চলচ্চিত্রে ‘উনকি নাজরোঁ সে মোহাব্বত কা জো পয়গম মিলা’ গান দিয়ে সংগীতাঙ্গনে আলোচনায় আসেন। ১৯৬০-এর দশকে তিনি নিয়মিত পাকিস্তান টেলিভিশনে পরিবেশনা করতে থাকেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সালে তিনি জিয়া মহিউদ্দিন শো-তে গান পরিবেশন করতেন এবং ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেওয়া শুরু করেন।
১৯৭৪ সালে রুনা লায়লা কলকাতায় সিলেটি গান ‘সাধের লাউ’-এর রেকর্ড করেন। একই বছর মুম্বাইয়ে তিনি প্রথমবারের মত কনসার্টে সংগীত পরিবেশন করেন। এ সময় দিল্লিতে তার পরিচালক জয়দেবের সঙ্গে পরিচয় হয়, যিনি তাকে বলিউড চলচ্চিত্রে এবং দূরদর্শনের উদ্বোধনী আয়োজনে গান পরিবেশনের সুযোগ করে দেন।
‘এক সে বাড়কার এক’ চলচ্চিত্রের শীর্ষ গানের মাধ্যমে সংগীত পরিচালক কল্যাণজি-আনন্দজির সঙ্গে প্রথম কাজ করেন রুনা লায়লা। এই গানের রেকর্ডিংয়ের সময় প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী লতা মুঙ্গেশকর তাকে আশীর্বাদ করেন। রুনা ‘ও মেরা বাবু চেল চাবিলা’ ও ‘দামা দম মাস্ত কালান্দার’ গান দুটি দিয়ে ভারত এবং পাকিস্তান জুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
এ তো গেল বিদেশের গল্প, বাংলাদেশে অসংখ্য অ্যালবামে তিনি গান করেছেন। তার মধ্যে রয়েছে একক ও মিক্সড অ্যালবাম দুটোই। পাশাপাশি সেই সত্তরের দশক থেকে এখন পর্যন্ত গান গেয়েছেন কয়েকশ চলচ্চিত্রে। দেশ-বিদেশে করেছেন অসংখ্য লাইভ কনসার্ট। পেয়েছেন নামিদামি বহু পুরস্কার। বাংলাদেশের সংগীত জগতে তার নামটি স্বর্ণের অক্ষরে লেখা থাকবে চিরকাল।
রুনা লায়লার যত পুরস্কার
সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন রুনা লায়লা। পেয়েছেন রেকর্ড সাত বার ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’। ১৯৭৬ সালে ‘দি রেইন’, ১৯৭৭ সালে ‘যাদুর বাঁশি’, ১৯৮৯ সালে ‘অ্যাক্সিডেন্ট’, ১৯৯৮ সালে ‘অন্তরে অন্তরে’, ২০১২ সালে ‘তুমি আসবে বলে’, ২০১৩ সালে ‘দেবদাস’ এবং ২০১৪ সালে ‘প্রিয়া তুমি সুখী হও’ ছবিগুলোর জন্য এ পুরস্কার লাভ করেন রুনা লায়লা।
২০১৬ সালে জিতেছেন জয়া আলোকিত নারী সম্মাননা। এছাড়াও ভারত থেকে লাভ করেছেন সায়গল পুরস্কার, সংগীত মহাসম্মান পুরস্কার, তুমি অনন্যা সম্মাননা এবং দাদা সাহেব ফালকে সম্মাননা। অন্যদিকে, পাকিস্তান থেকে পেয়েছেন নিগার পুরস্কার, ক্রিটিক্স পুরস্কার, দুই বার গ্রাজ্যুয়েট পুরস্কার এবং জাতীয় সংগীত পরিষদ স্বর্ণপদক।
চলচ্চিত্রে অভিনয়
রুনা লায়লা চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘শিল্পী’ নামের একটি ছবিতে চিত্রনায়ক ও স্বামী আলমগীরের বিপরীতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শিল্পী ছবিটি ইংরেজি চলচ্চিত্র ‘The Bodyguard’-এর ছায়া অবলম্বনে চিত্রিত হয়েছিল।
রুনা লায়লার ব্যক্তিগত জীবন
ব্যক্তিগত জীবনে রুনা লায়লা ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশি চিত্রনায়ক আলমগীরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার মেয়ে তানি লায়লা ও দুই নাতি জাইন এবং অ্যারন। এর আগে রুনা লায়লা আরও দুটি বিয়ে করেন। প্রথমবার তিনি খাজা জাভেদ কায়সারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দ্বিতীয়বার তিনি সুইস নাগরিক রন ড্যানিয়েলকে বিয়ে করেন।