অনলাইন ডেস্ক:
হঠাৎ ডলার বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকও হার্ডলাইনে। এরই মধ্যে বাজার অস্থিরতার সঙ্গে সন্দেহভাজন অন্তত ১৩টি ব্যাংকের কাছে ডলার বেচাকেনার তথ্য তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে অস্থিরতার কারণ অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা যুগান্তরকে বলেন, যে ১৩ ব্যাংকের ডলার লেনদনের তথ্য তলব করা হয়েছে, তাদের মধ্যে কয়েকটি ব্যাংক নির্ধারিত তারিখের (রেববার) তথ্য দাখিল করেছে। বিস্তারিত দেখে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, আগামী রমজানকে ঘিরে অন্য সময়ের তুলনায় অধিক আমদানি পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ডলারের জোগান তুলনামূলক কম। সেজন্য অতিরিক্ত চাহিদা পূরণের জন্য ব্যাংকগুলো ১২০ টাকা ঘোষিত দরের চেয়ে কমপক্ষে ৮ টাকা বেশি দরে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে খোলাবাজারেও। এর সুযোগ নিয়ে একটি অসাধু চক্র খোলাবাজারে ১২১ টাকার স্থলে সর্বাচ্চ ১২৯ টাকায় ডলার বিক্রি করছে। এতে ডলার বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে।
ব্যাংকগুলোর কাছে আমদানির জন্য পর্যাপ্ত ডলার নেই। সেজন্য কয়েকটি ব্যাংক ঘোষিত দরের চেয়ে অন্তত ৮ টাকা বেশি দরে ডলার কিনছে। অপরদিকে এলসির বকেয়া পরিশোধে কড়াকড়ি নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন পরিস্থিতি সামলাতে ব্যাংকগুলো বেশি দরে ডলার কিনে এলসি বিল পরিশোধ করছে। খোলাবাজারেও ডলারের দর ১২৯ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। বিষয়টি উপলদ্ধি করে বাংলাদেশ ব্যাংক মনিটরিং জোরদার করেছে।
ব্যাংকের কয়েকজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, ব্যাংকগুলোকে চলতি মাসের মধ্যে পুরোনো আমদানি দায় পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেজন্য ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার কিনছে। এতে প্রবাসী আয় বাড়ছে। চলতি মাসের ২১ দিনে ২০০ মিলিয়নের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। এতে মোট রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আইএমএফ-এর পরামর্শে বিপিএম হিসাবে তা ১৯ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। আর ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ প্রায় ১৫ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার, যা আইএমএফ-এর বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়নের চেয়ে সামান্য কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর ডলারের বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ রেট হলো ১২০ টাকা, যা গত জুনে ছিল ১১৮ টাকা এবং ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছিল ১১০ টাকা। সেই হিসাবে ১ বছরে ডলারের ঘোষিত দর বেড়েছে ১০ টাকা। আর বাজারের বাস্তবতার সঙ্গে তুলনা করলে বেড়েছে ১৮ টাকা।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এক্সচেঞ্জ কোম্পানিগুলো ১২৪ থেকে ১২৫ টাকা ৬০ পয়সায় ডলার কিনেছে। তাদের কাছ থেকে স্বাভাবিকভাবে বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। মূলত প্রতি ডিসেম্বরের মতো এ বছরও বেশি আমদানি বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। তেল, রাসায়নিক সার ও রমজানের পণ্য আমদানির জন্য বেশি ডলার প্রয়োজন। মতিঝিলে একটি এক্সচেঞ্জ হাউজের বিক্রয়কর্মী বলেন, খোলাবাজারে প্রতি ডলার কেনা হচ্ছে ১২৬-১২৮ টাকা। মাত্র ১০ দিন আগেও খোলাবাজারে ১২৩-১২৪ টাকায় লেনদেন হয়েছে ডলার। ডিসেম্বরে অনেকেই ছুটি কাটাতে বিদেশে যাচ্ছেন। সেজন্য ডলারের চাহিদা বেড়েছে।
জানা যায়, ব্যাংকের মতো খোলাবাজারে রোববার ডলারের লেনদেনের ঘোষিত দর ১২০-১২১ টাকা ছিল, যা গত জুনে ছিল ১১৯-১২০ টাকা এবং গত বছরের ডিসেম্বরে ছিল ১১২-১১৩ টাকা। সেই হিসাবে ১ বছরে বেড়েছে প্রায় ৮ টাকা।
মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব গৌতম দে বলেন, ব্যাংকের মতো খোলাবাজারেও ডলারের চাহিদা বেড়েছে। কোথাও ১২৫-১২৬ টাকার নিচে ডলার মিলছে না। অসাধু চক্র বাজার অস্থির করেছে। মনিটরিং বাড়ালে কয়েকদিনের মধ্যেই বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।