21 C
Dhaka
আজঃ মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৫

Live TV

টিকে থাকার জন্য উন্নত সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিকল্প নেই

ডিজিটাল ডেস্ক:

বৈশ্বিক আধুনিকায়নে ব্যাক্তিগত থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন কাজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। সরকারি পরিসেবাগুলো সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সহজে পৌঁছে দিতেও অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে। গ্রাহকদের কথা মাথায় রেখে তাদের সুবিধার কথা ভেবে বিভিন্ন ব্যাংকিং সেবা পর্যন্ত অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে। ঠিক একারণেই প্রতিনিয়ত সাইবার হামলার শিকার হচ্ছে বিভিন্ন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান।

প্রচলিত যুদ্ধের চেয়ে সাইবার যুদ্ধ অনেকটা আলাদা। বেশিরভার সময় আক্রান্ত ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান টেরও পায় না যে সে বা তারা সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। বিশাল সংখ্যক প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী যে পরিমাণ ক্ষতি সাধন করতে পারে একজন দক্ষ সাইবার বিশেষজ্ঞ হ্যাকার তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম।

হ্যাকিং হচ্ছে, বিনা অনুমতিতে কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম অথবা কোনো স্মার্ট ডিভাইসে নেটওয়ার্কিং সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করা।

কোনো ব্যাক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান যেকেউ হ্যাকিং এর মাধ্যমে সাইবার আক্রমণের শিকার হতে পারে। নিমিষের ভুলে সর্বশান্ত হয়ে যেতে পারে আক্রান্ত ভুক্তভোগী। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে সাইবার হামলা চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করা যায়। ফলে উন্নত দেশগুলো আধুনিক সমরাস্ত্র উদ্ভাবন করার পাশাপাশি দক্ষ সাইবার হামলা পরিচালনা করার মতো সক্ষমতা অর্জন করে চলেছে।
বিভিন্ন উপায়ে সাইবার হামলা পরিচালনা করা সম্ভব। ফিসিং, বটনেট, ভাইরাস, ডিডিউএস, ম্যালওয়্যার, স্পাইওয়ার ও র‍্যানসমওয়ার ইত্যাদি মাধ্যম ব্যবহার করে মারাত্মক সব সাইবার হামলা করা যায়। যার মাধ্যমে অন্যের কম্পিউটার সিস্টেমের পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নেটওয়ার্ক সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্ভব। অতি গোপনীয় তথ্য চুরি হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সুরক্ষিত নথিপত্রও চুরি করতে পারে হ্যাকাররা। শুধু তাই না, পৃথিবীর যেকোনো দেশ বা শহরকে অল্প সময়ের মধ্যে অচল করে ফেলা সম্ভব।

কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, চিকিৎসা সেবা, টেলি কমিউনিকেশন, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ গ্রিড একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ছোট একটি ম্যালওয়্যারই অতিক্ষুদ্রতম সময়ের মধ্যে এসব সেবামূলক খাতে বড় ধরনের ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারে। আজকাল কোনো দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে বিধ্বংসী মারণাস্ত্রের প্রয়োগ করার প্রয়োজন পরে না। 

অতীত ইতিহাস ঘাটলে অজস্ত্র প্রমাণ পাওয়া যাবে। যেখানে এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে সাইবার যুদ্ধের কৌশল অবলম্বন করেছে। ২০০০ সাল থেকে ২০০৩ এর মধ্যবর্তী সময়ে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা ও সমরাস্ত্র নির্মাণকারী সংস্থা লকহিটমার্টিন হ্যাকারদের মাধ্যমে মারাত্মক সাইবার হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সাইবার আক্রমণটির নাম ছিলো ‘টাইটানরেইন’।

মার্কিন গোয়েন্দা কার্যক্রমের ওপর নজরদারি চালানোর জন্য ‘টাইটানরেইন’ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। কারা সাইবার হামলার সঙ্গে জড়িত তা কোনোভাবেই বুঝা যাচ্ছিল না। অনুসন্ধানের মাধ্যমে পরে চীনের হ্যাকারদের জড়িত থাকার ব্যাপারটি নিশ্চিত করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছিল, চীন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এ হামলা পরিচালনা করেছে। স্বভাবসুলভ চীন পুরো ব্যাপারকে অস্বীকার করেছিল। এমনকি সাইবার হামলার মাধ্যমে কোনো দেশকে অচল করার মতো বিরল ঘটনাও ঘটেছে।

সোভিয়েত আমলে নিহত সৈনিকদের একটি সমাধি ক্ষেত্র সরিয়ে নেওয়াকে কেন্দ্র করে রাশিয়া এস্তোনিয়ার সঙ্গে তীব্র বিরোধে জড়ায়। এর জবাবে সাইবার আক্রমণ চালিয়ে এস্তোনিয়ার সরকারি ওয়েবসাইট, পার্লামেন্ট, বিভিন্ন মন্ত্রনালয়, ব্যাংক, সংবাদপত্র ও টেলিভিশনসহ বহু ডিজিটাল অবকাঠামোকে অচল করে দিয়েছিল। জনজীবন সাময়িক সময়ের জন্য থমকে গিয়েছিলো। সাইবার হামলার তীব্রতা এতোই ভয়াবহ ছিল যে কিছু সময়ের জন্য দেশটি ইন্টারনেট সংযোগ থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দেশটির অর্থনীতি থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ২০০৭ সালের এই ঘটনাটি পুরো বিশ্ববাসীকে স্তম্ভিত করেছিল।

তবে এমন ঘটনা প্রতিনিয়তই প্রত্যক্ষ করেছে পৃথিবীবাসী। ইসরায়েলের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা হঠাৎ করে মারাত্মকভাবে ব্যহত হয়। ব্যাপারটির কোনো সুরাহা করা যাচ্ছিল না। পরে মার্কিন সাইবার নিরাপত্তা গবেষণা সংস্থা ফায়ার আইকে ঘটনার কারণ ক্ষতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হলে তাদের অনুসন্ধানের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয় ইরান থেকে। বিষয়টি গোপন রাখার জন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সার্ভার থেকে একযোগে অভিযান পরিচালনা হয়। ৬টি পানি সরবরাহ কেন্দ্রের অপারেটিং সিস্টেম এবং তার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে অচল করে দেয়। পাল্টা জবাব হিসেবে ইরানের বন্দর আব্বাস-এর স্বাভাবিক কার্যক্রম সাইবার হামলা চালিয়ে অচল করা হয়।

সাম্প্রতিককালে ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রে সাইবার আক্রমণ করে পারমাণবিক কার্যক্রমকে ব্যহত করার প্রয়াস চালানো হয়। এক বিবৃতিতে মোসাদ প্রধান স্বীকার করেন, তারাই এই হামলা পরিচালনা করেছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮১০ মিলিয়ন ডলার সাইবার হামলার মাধ্যমে চুরি করার ঘটনাটি কারোরই অজানা নেই।

হ্যাকিং এর মাধ্যমে সাইবার হামলায় সফলতা অর্জনের জন্য প্রয়োজন দক্ষ প্রোগ্রামার। একই সাথে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা, সাইবার সিকিউরিটি সিস্টেম এবং প্রতিটি সার্ভার সম্পর্কে সম্মুখ জ্ঞান থাকলেই দক্ষ হ্যাকার হওয়া সম্ভব। সাইবার হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চীন, রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দক্ষ হ্যাকার তৈরি করছে। সেক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যসহ উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে হ্যাকারদের নিরাপদ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। ভয়ংকর সব সাইবার অপরাধীদের মেধা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান অভেদ্য ও নিরাপদ সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে।

অনেক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতের যুদ্ধ হবে বর্তমানের থেকে পুরোপুরি আলাদা। বোমা বা মিসাইল নিক্ষেপের বদলে যুদ্ধ হবে তথ্যনির্ভর অথবা যার কাছে প্রযুক্তি ও পর্যাপ্ত তথ্য থাকবে বিজয়ের শেষ হাসিটি হবে তারই। তাই টিকে থাকার জন্য, নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য উন্নত সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই

এ ধরনের আরো খবরঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরাঃ

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe

EYE TV Bangla

সাম্প্রতিক খবরঃ