আই টিভি বাংলা অনলাইন ডেস্ক:
৭২’র সংবিধান বাতিল এই মুহূর্তে সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ২০২৫ সালের মধ্যেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়া সম্ভব। দ্রুত নির্বাচন হলে যে সংকটগুলো তৈরি হচ্ছে, তা অনেকাংশে কমে আসবে। দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। ভোটের অধিকার যদি প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে রাস্তায় নামতেই হবে।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’-এর খসড়া প্রস্তাবে বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের যে দাবি এসেছে, সে প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, এ দাবি এই মুহূর্তে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। ভবিষ্যতে যদি কখনো সুযোগ ও সময় আসে, তখন জাতির চিন্তা করে দেখা উচিত, বলে তিনি মনে করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে বাহাত্তরের মুজিববাদী সংবিধানের কবর দেয়ার বিষয়টি নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ছেলেরা তো অনেক অবেগপ্রবণ। যুবক, তাদের তারুণ্যে সবকিছু মিলিয়ে তাদের তো একটা আকাঙ্ক্ষা থাকতেই পারে। সেভাবে তাদের মতো করে তারা বলেছে। আমি মনে করি, তারা তাদের আবেগ থেকেই বলেছে, তারুণ্য থেকে বলেছে। এটাকে (বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের দাবি) এই মুহূর্তে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। ভবিষ্যতে যদি কখনো সুযোগ আসে, সময় আসে, তখন জাতির চিন্তা করে দেখা উচিত বলে আমি মনে করি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের কাছে আমরা সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছি। নির্বাচন হলে যে সংকটগুলো তৈরি হচ্ছে, তা অনেকাংশে কমে আসবে। নির্বাচিত সরকারে মানুষের যে আস্থা, সেই সঙ্গে নির্বাচিত সরকারের যে শক্তি তৈরি হয়, সেটা অনেক শক্তিশালী হয়। যে কারণে তারা অনেক কাজ করতে পারেন, যা অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে সম্ভব হয় না।
যদি জানুয়ারির মধ্যেও নির্বাচনি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না হয়, সেক্ষেত্রে দলের ভাবনা কী, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা ঠিক এ মুহূর্তে বলতে পারব না। এ মুহূর্তে কোনো বিরোধে কারো সঙ্গে যেতে চাই না। আমি মনে করি, এখন যেটা দরকার-সব বিষয়ে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা আমাদের একটা দায়িত্ব। সেভাবে আমরা কাজ করতে চাই।
আগামী জাতীয় নির্বাচন কবে নাগাদ চান, এ প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সেভাবে কিছু বলিনি। তবে আমরা মনে করি, ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া সম্ভব। সেটা ২৫ সালের মধ্যেই সব ব্যবস্থাই নিয়ে নেয়া যায়, যেগুলো প্রয়োজন নির্বাচনের জন্য।
সরকার ইচ্ছা করে নির্বাচন বিলম্ব করছে এ মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, হঠাৎ করে দেখলাম ভোটারের ন্যূনতম বয়সসীমা ১৭ বছরের কথা বললেন প্রধান উপদেষ্টা। তো এটা স্বাভাবিকভাবে আমাদের নির্ধারণ করা তো আছেই ১৮ বছর। সেটা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো বা অন্য স্টেকহোল্ডাররা তো কেউ কথা বলেননি। সেখানে এটিকে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এই যে বিভিন্নভাবে ছাত্ররা মুভমেন্ট করছেন, সেই মুভমেন্টে বেশিদিন ধরে ক্ষমতায় থাকার জন্য একটা প্রবণতা দেখা যায়। এটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু বয়সটা যদি কমানো যায়, সেটা আরো সময় লাগবে। নতুন ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে। অনেক সময় লাগবে। তো সেই ব্যাপারটার কারণে আমি বলেছি।
প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি সংস্কার চায় না, নির্বাচন চায়-এটা ঠিক নয়। বিএনপি প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচন চায়। আমরা বারবার বলছি, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যেটুকু (সংস্কার) দরকার, সেটুকু শেষে নির্বাচনে যেতে চাই। নির্বাচন যত দেড়ি হবে, দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট তত বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং আমরা বিশ্বাস করি, দ্রুত দ্রুত নির্বাচন সম্ভব করতে পারলে দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এর আগেও বলেছি, এ বিষয়ে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। এ সিদ্ধান্ত আসবে জনগণের কাছ থেকে।