20 C
Dhaka
আজঃ বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৫

Live TV

রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন, জাতীয় নিরাপত্তা নীতি তৈরিতে

 

আই টিভি বাংলা ডিজিটাল ডেস্ক: 

বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কোনো নীতি বা কাঠামো প্রণয়ন করা হয়নি। গত পাঁচ দশকের বেশি সময়ে যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারা যেটা ভালো মনে করেছে, সেটা করেছে। ৫ আগস্টের পর এখন পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সব রাজনৈতিক দলকে যুক্ত করে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিরাপত্তাকাঠামো প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে এক সংলাপে রাজনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা এই অভিমত দেন। ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক এই জাতীয় সংলাপের আয়োজন করে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (এফবিএস)। দুই দিনব্যাপী সংলাপের শেষ দিনে শেষ অধিবেশনে ‘ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশের স্বার্থ ও নিরাপত্তা’ বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

আলোচনায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘দেশের জাতীয় স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য প্রয়োজন। দ্বিমত থাকতে পারে। একই বিষয়ে বিভিন্ন সমাধান থাকে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে ঐক্য থাকা প্রয়োজন। পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই আছে। যেসব দেশে দুটি বড় দল আছে, সেখানেও আলোচনার ভিত্তিতে অনেক কিছু নির্ধারিত হয়। কিন্তু আমাদের দেশে গত ৫৩ বছরে তা দেখিনি। সব সময় সরকার যেটা মনে করেছে, তাই করেছে।’

অনেক সময় সরকারি দল সঠিক সিদ্ধান্ত নিলেও বিরোধী দল বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করে বলেও মন্তব্য করেন মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশের স্বার্থে বৃহৎ ঐক্য প্রয়োজন। সেখানে আলোচনা হবে; একতরফা কিছুই হবে না। বলা হয়, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। কিন্তু বাস্তবে দেখেছি উল্টোটা। দেখেছি রাষ্ট্রের চেয়ে একটা গ্রুপ বা অলিগার্কদের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে যিনি প্রধান, তাঁর স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র মূলনীতি থেকে সরে যায়।’

ভারত–চীন সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ভারত ও চীনের মধ্যে সংঘাত আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে সখ্য আছে। আমাদের এই তিনটি দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের একটা কথা মনে রাখতে, ভারত ও চীনের মধ্যে এত শত্রুতা, কিন্তু সেখানে বাণিজ্যের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আমাদের প্রতিটি দেশের সঙ্গে স্বার্থ আছে। কারণ, আমরা যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাবশালী দেশ নই, তাই আমাদের একধরনের ভারসাম্য রেখে চলতে হবে।’

সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে একজন দর্শকের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে সেনাপ্রধানের বৈঠক সম্পর্কে আমরা অবগত, এতে গোপনীয় কিছু ছিল না।’

আরাকান আর্মি নিয়ে আশঙ্কা

বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল ও পার্বত্যাঞ্চলে আরাকান আর্মির প্রভাব বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা প্রয়োজন। আমরা যখন পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কথা বলি, তখন শুধু শান্তিবাহিনীর কথা বলছি। কিন্তু ওদিকে আরও বড় বিপদ। সীমান্তের ওপারের এলাকা এখন আরাকান আর্মির দখলে। তারা বাঙালি ও ইসলামবিদ্বেষী। তারা রোহিঙ্গাদের জন্যও আশীর্বাদস্বরূপ নয়। তারা নতুন করে ৫০-৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে ঠেলে দিয়েছে, সীমান্তের ওপারে আরও লাখখানেক অপেক্ষা করছে। আরাকান আর্মির পাশাপাশি ভারতও সীমান্ত এলাকায় জটিল পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে।’

আমীর খসরু মনে করেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি গোয়েন্দা সংস্থাকে এখন পুনর্গঠনের পাশাপাশি নতুন করে তাদের করণীয় নির্ধারণ করে দেওয়া প্রয়োজন। তিনি একটি জাতীয় নিরাপত্তাকাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলের একটা ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। নিরাপত্তাকাঠামো বলতে শুধু সীমান্ত পাহারা দেওয়া নয়। একই সঙ্গে আমাদের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, যোগাযোগব্যবস্থা, খাদ্যনিরাপত্তা, খাদ্য সরবরাহব্যবস্থা সবকিছুকে এখানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

‘যেকোনো সংস্কার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হতে হবে’

সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কোনো কোনো মহলের সমালোচনার দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপি নেতা আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা বারবার একটা রেকর্ড শুনছি, দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে, আমাদের এটার জবাব দিতে হচ্ছে। বলা হচ্ছে, রাজনীতিবিদেরা আগের জায়গায় ফিরে যাবেন না। আমি বেশ কিছুদিন ধরেই এই লেকচার শুনে চলেছি। পরিষ্কারভাবেই বলতে চাই, যেকোনো পরিবর্তন, যেকোনো সংস্কার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেউই এতটা জ্ঞানী নন যে দেশের পরের ৫০ বছরের জন্য সবকিছুর সুরাহা করে ফেলবেন। এই প্রক্রিয়াটা গণতান্ত্রিকভাবে হতে হবে। কারণ, এমন জ্ঞান কারও নেই যে তাঁরা বসে বসে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ঠিক করবেন। এই প্রক্রিয়াটা রাজনৈতিকভাবে হতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াই একমাত্র পথ। জনগণের কাছে যেতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এটাই পরিবর্তনের একমাত্র পথ।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, গত ১৫ বছরের পররাষ্ট্রনীতি ছিল গদি রক্ষার নীতি। এখানে কোনো পররাষ্ট্রনীতি, দেশের স্বার্থ ছিল না। সম্পূর্ণ অর্থে একটা সরকার গদি রক্ষার জন্য বিদেশনীতি সাজিয়েছিল। ফলে দেশের স্বার্থ ও নিরাপত্তা নানাভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। বিগত সরকার গদি রক্ষার স্বার্থে অপরাপর শক্তিকে খুশি করেছে। এর মধ্যে ভারত প্রধান জায়গায় দাঁড়িয়েছে। এমনকি মিয়নামারের সঙ্গেও বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করে, এমন কোনো পররাষ্ট্রনীতি ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওবায়দুল হক বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আলোচনায় আমাদের একটা ক্লান্তি চলে এসেছে। এ নিয়ে আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকে বাঙালি–পাহাড়ি বিরোধ বা শান্তিচুক্তির মতো বিষয়গুলো নিয়ে। এখানে আরও অনেক ভূরাজনৈতিক দিক রয়েছে, যেগুলো নিয়ে আলোচনা হয় না। যেমন কানেক্টিভিটির নিরাপত্তার বিষয়গুলো আলোচিত হয়নি।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক শাফকাত মুনিরের সঞ্চালনায় এই আলোচনায় আরও অংশ নেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির, এবি পার্টির যুগ্ম সচিব দিদারুল আলম, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও সহমুখপাত্র তাহসীন রিয়াজ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল।

এ ধরনের আরো খবরঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরাঃ

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe

EYE TV Bangla

সাম্প্রতিক খবরঃ