15 C
Dhaka
আজঃ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

Live TV

গাজায় প্রতিদিন ৪২০ শিশু হতাহত: ইউনিসেফ

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর যুদ্ধ চার সপ্তাহে গড়িয়েছে। গত ৭ অক্টোবর ভোরে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের অতর্কিত হামলার জেরে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

এতে পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, ইসরায়েলি বিমান ও রকেট হামলায় গাজায় প্রতিদিন হতাহত হচ্ছে চার শতাধিক ফিলিস্তিনি শিশু। এমন তথ্য সামনে এনেছে জাতিসংঘের শিশু নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।

মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল জানিয়েছেন, ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজা উপত্যকায় প্রতিদিন ৪২০ জনেরও বেশি শিশু নিহত বা আহত হচ্ছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে তিনি বলেন, ‘গাজায় চলমান যুদ্ধে শিশু অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন, সেই সঙ্গে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গাজায় ইতিমধ্যে ৮ গাজার ৩০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩ হাজার ৪০০ জন শিশু। এছাড়া ৬ হাজার ৩০০ জনের বেশি শিশু আহত হয়েছে। এর মানে হল, গাজায় প্রতিদিন ৪২০ জনেরও বেশি শিশু নিহত বা আহত হচ্ছে- এমন একটি সংখ্যা যা আমাদের প্রত্যেকের মূলে নাড়া দিতে পারে।’

ক্যাথনির জানান, শিশুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংসতা গাজা উপত্যকার বাইরেও ঘটছে। পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরে অন্তত ৩৭ শিশু নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। সংঘাতে ৩০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি শিশু নিহত হয়েছে। গাজা উপত্যকায় অন্তত ২০ শিশু বন্দি রয়েছে, তাদের ভাগ্য এখনও অজানা।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে ক্যাথরিন রাসেল আরও বলেন, ‘বেসামরিক অবকাঠামোও মারাত্মক আক্রমণের মুখে পড়েছে। গাজায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২১টি হাসপাতালসহ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ৩৪টি হামলার খবর পাওয়া গেছে। গাজার ৩৫টি হাসপাতালের মধ্যে ১২টি হাসপাতাল- যা বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলোর কার্যক্রম বোমা হামলায় থেমে গেছে। অন্তত ২২১টি স্কুল এবং ১ লাখ ৭৭ হাজারের বেশি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।’

‘এদিকে গাজায় যে সামান্য বিশুদ্ধ পানি অবশিষ্ট আছে তা দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে, যার ফলে ২০ লাখের বেশি মানুষ মারাত্মক মানবিক সংকটের মুখে রয়েছে। আমরা অনুমান করছি যে, পানি সরবরাহের পরিকাঠামোর ৫৫ শতাংশ মেরামত বা পুনর্বাসনের প্রয়োজন। শুধুমাত্র একটি ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট মাত্র ৫ শতাংশ ক্ষমতায় কাজ করছে, গাজার ছয়টি জল-বর্জ্য শোধনাগার এখন জ্বালানি বা বিদ্যুতের অভাবের কারণে অকার্যকর। বিশুদ্ধ পানি ও নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব একটি বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে। অবিলম্বে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ পুনরায় সচল না করা হলে, শিশু সহ আরও বেসামরিক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে, ডিহাইড্রেশন বা পানিবাহিত রোগে মারা যাবে।’

নিরাপত্তা পরিষদকে ক্যাথরিন বলেন, ‘চলমান যুদ্ধে শিশুদের এত দুর্দশাকে যদি যথেষ্ট বলে মনে না হয়, তাহলে আরও রয়েছে। ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি উভয় দেশের শিশুরা ভয়ানক ট্রমার শিকার হচ্ছে, যার পরিণতি সারাজীবন স্থায়ী হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, সহিংসতা শিশুদের মধ্যে বড় ধরনের নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি করে, যা তাদের শারীরিক ও জ্ঞানীয় বিকাশ প্রভাবিত করে এবং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে।’

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘আমরা অভাবগ্রস্ত শিশুদের কাছে পৌঁছানোর জন্য আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি, কিন্তু মানবিক সহায়তা প্রদান, বিশেষ করে গাজায়, এখন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। এটি গাজায় আরোপিত বর্তমান অবরোধ পরিস্থিতি ও আমাদের কর্মীরা যে অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কাজ করছে উভয়ের কারণে।’

ক্যাথরিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এবং সংঘাত-শত্রুতা যদি শেষ না হয়, তাহলে আমি এই অঞ্চলের শিশুদের ভাগ্য নিয়ে শঙ্কিত।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে ‘অবিলম্বে’ একটি রেজুলেশন পাস করার আহ্বান জানান। সেখানে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর পাশাপাশি গাজায় নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার দাবি এবং অবিলম্বে বন্দি সব শিশুর নিরাপদ মুক্তির বিষয়টি উল্লেখ থাকার কথা জানান ক্যাথরিন রাসেল।

এ ধরনের আরো খবরঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরাঃ

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe

EYE TV Bangla

সাম্প্রতিক খবরঃ