বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে জার্মান ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
তিনি বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে জার্মান প্রবাসী ও বিদেশি ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে পারেন। এখানে বিনিয়োগ করে মুনাফা পাওয়া যায়। মুনাফা ও বিনিয়োগকৃত অর্থ খুব সহজেই কোনও অনুমতি ছাড়াই ব্যাংকের মাধ্যমে তুলে নেওয়া যায়। তাই আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা অনেক সহজ।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) জার্মানির বার্লিনে ইন্টারকন্টিনেন্টাল বার্লিন, বুদাপেস্টর হোটেলে ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: বাংলাদেশ-জার্মানি ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট- ২০২৩’ শীর্ষক অনুষ্ঠিত রোড শোতে তিনি এ আহ্বান জানান।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে খুব ভালো রিটার্ন পাওয়া যায়। বর্তমানে আমাদের মোট মার্কেট ক্যাপিটাল ৭২ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে মোট ইক্যুইটি মার্কেট ক্যাপিটাল ৪১.২১ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩ সালে অ্যাভারেজ মার্কেট টার্নওভার ৫৯ বিলিয়ন ডলার। সেজন্য আপনারা পুঁজিবাজারের ইক্যুইটি মার্কেটে বিনিয়োগ করতে পারেন। পাশাপাশি সম্প্রতি বিকশিত হওয়া ডেবট (বন্ড) মার্কেটে বিনিয়োগ করতে পারেন। সেখান থেকেও অনেক ভালো রিটার্ন পেতে পারেন। এছাড়া ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজেও বিনিয়োগ করতে পারেন, যা ভালো রিটার্ন দেয়।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে অন্যান্য দেশের তুলনায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে কম অস্থিরতা বিরাজ করছে। কোভিড ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরবর্তী বিগত দুই বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন-ভারত, পাকিস্তান, হংকং, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চেয়েও বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে সবচেয়ে কম অস্থিরতা বিরাজ করার তালিকার শীর্ষে রয়েছে। পুঁজিবাজারে কম অস্থিরতা বিরাজ করার তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান, তৃতীয় অবস্থানে যুক্তরাজ্য, চতুর্থ অবস্থানে ভারত, পঞ্চম অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র ও ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে হংকং। তাই সম্প্রতি এইচএসবিসি ব্যাংক জানিয়েছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সঠিক জায়গা। দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জন্য আমাদের পুঁজিবাজারে ভালো মানের স্টক রয়েছে। কারণ বাংলাদেশে ভালো কোম্পানি হিসেবে তারা ভালো রিটার্ন দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আমাদের বড় বিনিয়োগসহ ফাইনান্সিং স্ট্রাটেজি প্রয়োজন। আমরা আমাদের নিজস্ব উৎস থেকে অনেক বিনিয়োগ করেছি। তবে সেই সঙ্গে আমাদের বিদেশি বিনিয়োগও প্রয়োজন। আমরা ২০ থেকে ৩০ বছর আগে ইউরোপে এসেছিলাম সাহায্য ও ঋণ গ্রহণের জন্য। কিন্তু এখন আমরা এসেছি বিনিয়োগ, ব্যবসা ও বাণিজ্য করার জন্য। তাই সাহায্য গ্রহীতা দেশ থেকে ব্যবসায়িক অংশীদারত্বের দেশে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করার জন্য জার্মানিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। জার্মানিতে আমরা বিনিয়োগ, ব্যবসা ও বাণিজ্য খুঁজতে এসেছি।
শিবলী রুবাইয়াত বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানির চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির ভিত্তি ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’। এ জন্য গত ৫০ বছরে আমরা অনেক এগিয়েছি। ট্রেড, ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন অ্যান্ড প্রটেকশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ ও জার্মানির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে জার্মানি আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক সহযোগী। জার্মানি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক আমদানিকারক দেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে ইউরোপে আমরা ৪৫.৪২ শতাংশ রপ্তানি করি। এর মধ্যে শুধু জার্মানিতে প্রায় ২৮ শতাংশ রপ্তানি করে থাকি। আর ইউরোপ থেকে বাংলাদেশ ৭.৪৩ শতাংশ আমদানি করি। আর এর মধ্যে শুধু জার্মানিতে প্রায় ২৮ শতাংশ আমদানি করে থাকি। বর্তমানে বাংলাদেশ ও জার্মানির মধ্যে গ্রোইং ট্রেড রিলেশনশিপ রয়েছে। এ সম্পর্ক দিনে দিনে আরও শক্তিশালী হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ও জার্মানির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অনেক বেড়েছে। আগামীতে বাংলাদেশ বড় বিনিয়োগ প্রত্যাশা করে জার্মানির কাছে। এর অর্থ আমরা দুই দেশ ইতোমধ্যে একসঙ্গে কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশিও কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসছে। তারা বিভিন্ন ধরনের ম্যানুফ্যাকচারিং ও ইঞ্জিনিয়ারিং নিজস্ব পণ্য উৎপাদন করছে। আমাদের এখন অ্যাসেমব্লেইং কোম্পানি রয়েছে। এখন তারা গাড়ি, মোটরসাইকেল, ফ্রিজ এবং বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও হাউজহোল্ড প্রোডাক্ট উৎপাদন শুরু করছে। এক সময় আমরা সিমেন্ট আমদানিকারক দেশ ছিলাম। আর এখন আমরা সিমেন্ট রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছি। লাফার্জ, হাইডেলবার্গসহ বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির বাংলাদেশে রয়েছে। আমাদের সিমেন্ট খাতে ৩৭টি কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনা করছে। আমাদের ৩৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন সিমেন্টের চাহিদার বিপরীতে আমরা ৫৮ মিলিয়ন টন সিমেন্ট উৎপাদন করছি। ফলে সহজেই সিমেন্ট রপ্তানি করা যাচ্ছে।
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ভৌগলিক দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পাশে চীন এবং ভারত রয়েছে। দক্ষিণে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামের মতো টেকসই অর্থনীতির দেশগুলোর অবস্থান। তাদের টেকসই অর্থনীতি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিএসইসি এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডার) যৌথভাবে এ রোড শো’র আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় জার্মানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মোশাররফ হোসাইন ভূঁইয়া, ফরেন ট্রেড অ্যান্ড মেম্বার অব দ্য এক্সিকিউটিভ বোর্ডের প্রধান নির্বাহী ড. ভোলকের ট্রেইরর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। রোড শোটি সঞ্চালনা করেন এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের (এলআর গ্লোবাল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিআইও রিয়াজ ইসলাম।