দাম্পত্য সম্পর্কে বিশ্বাসঘাতকতা একটি মর্মান্তিক বিষয়। বেশিরভাগ মানুষ এক্ষেত্রে সঙ্গীর ওপর অবিশ্বাস করে অন্ধকারে থাকার চেয়ে বরং সত্যিটা জানতে চান।
Google news
অসৎ সঙ্গীকে হাতেনাতে ধরতে কিংবা সন্দেহের বিষয়টি নিশ্চিত হতে অনেকে প্রাইভেট ডিটেকটিভ নিয়োগ দেন, যারা লুকানো সম্পর্ক এবং অবৈধ বিষয়গুলো উন্মোচনের জন্যই কাজ করে। এ কাজে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার ফলে প্রাইভেট ডিটেকটিভদের সেসব লক্ষণ জানা থাকে, যেগুলো অবৈধ সম্পর্কে জড়ালে মানুষজন লুকানোর চেষ্টা করে।
এরকমই একজন খ্যাতনামা প্রাইভেট ডিটেকটিভ হলেন থমাস জি. মার্টিন। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের একজন সাবেক কর্মকর্তা তিনি। চাকরি থেকে অবসরের পর ক্যালিফোর্নিয়ার নিউপোর্ট বিচে প্রতিষ্ঠা করেন প্রাইভেট ডিটেকটিভ প্রতিষ্ঠান ‘মার্টিন ইনভেস্টিগেটিভ সার্ভিসেস’। তদন্তের কাজে ৪০ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে ‘সিয়িং লাইফ থ্রো প্রাইভেট আইস’ নামক বই-ও লিখেছেন তিনি। ওই বইতে তিনি সবচেয়ে কমন ২০টি ‘ক্লু’ দিয়েছেন, যেগুলো সম্পর্কে প্রতারণার ইঙ্গিত দিতে পারে।
মার্টিনের মতে, এসব লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি বা দুটি সঙ্গীর মধ্যে চিহ্নিত করাটা চিন্তার কোনো কারণ নয়। কিন্তু যদি আপনি চারটি বা তার বেশি লক্ষণ চিহ্নিত করেন, তাহলে তা আপনার সঙ্গীর প্রতারণার স্পষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।
অবৈধ সম্পর্কে জড়ানোর সবচেয়ে কমন এবং সুস্পষ্ট লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় কাটানো, ঘন ঘন ব্যবসায়িক ভ্রমণ যাওয়া, যৌনমিলনে আগ্রহ কম দেখানো। এছাড়া হঠাৎ করে জিমে ভর্তি হওয়া বা নতুন পোশাকের প্রতি আগ্রহ অন্যতম লক্ষণ হতে পারে যে, আপনার সঙ্গী নিজেকে আরো ভালো করার জন্য কাজ করছেন- সম্ভবত অন্য কারো কথা মাথায় রেখে।
মার্টিন জানান, কেবল একটি বা দুটি লক্ষণ দেখতে পাওয়ার মানে এটা নয় যে, আপনার সঙ্গী অবশ্যই দোষী। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি সম্পর্ক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়। কিন্তু সঙ্গীর মধ্যে যদি তিনটি বা চারটি লক্ষণ দেখতে পান, তাহলে তার মধ্যে সমস্যা রয়েছে।
মার্টিনের মধ্যে, এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হলো আপনার নিজের ‘অন্তর্দৃষ্টি’। সঙ্গী ১০০ শতাংশ সৎ না হলে তা নিজের ‘অন্তর্দৃষ্টি’ দিয়ে সাধারণত বোঝা যায়।
সঙ্গী পরকীয়ায় জড়ানোর ২০টি কমন লক্ষণ-
* অভ্যাস পরিবর্তন।
* বাসা থেকে তাড়াতাড়ি বের হওয়া আর দেরি করে ফেরা।
* ঘন ঘন ব্যবসায়িক ভ্রমণ।
* ছুটির দিন বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে অনুপস্থিতি।
* অতিরিক্ত ওভারটাইম।
* ব্যাখ্যাতীত ব্যয়।
* সোশ্যাল মিডিয়ায় গোপন অ্যাকাউন্ট।
* লুকানো ক্রেডিট কার্ডের বিল।
* অতিরিক্ত সাজসজ্জা।
* অন্য কারো জিনিস (যেমন কলারে লিপস্টিকের দাগ)।
* আপনাকে দেখানো হয়নি এমন উপহার কেনা।
* অপ্রত্যাশিত জিনিস (গাড়িতে কনডম লুকানো)
* জিমে ভর্তি হওয়া।
* অপরিচিত নম্বর থেকে মিসড কল।
* সাংকেতিক মেসেজ পাঠানো।
* কম যৌনমিলন।
* কথার স্পষ্ট উত্তর না দেওয়া বা নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানো।
* স্পষ্ট মিথ্যা বলা।
* অল্পতে রেগে যাওয়া।
* আপনার সারপ্রাইজ উপস্থিতিতে রেগে যাওয়া।
যদি এসবের মধ্যে কোনো লক্ষণ-ই আপনার সঙ্গী প্রকাশ না করে, তাহলে আপনি নিজের অনুভূতির ওপর ভিত্তি করেও কোনো ক্লু পেতে পারেন।
মার্টিনের মতে, বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বেশিরভাগ মানুষ নিজেরাই প্রতারণা ধরতে পারে, সঙ্গীর প্রতারণা ধরার জন্য প্রাইভেট ডিকেটটিভের ওপর নির্ভর হওয়ার ততটা দরকার পড়ে না। কারণ লক্ষণগুলো সব একই। আগে যা ছিল, এখনও তাই। বর্তমান সময়ে সঙ্গীর প্রতারণা ধরা খুবই সহজ। গভীর রাতে ফোন কল বা টেক্সট মেসেজের লুকানোর মাধ্যমে মানুষ এখন নিজেরাই নিজেকে ধরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে।
যাহোক, মার্টিন সতর্ক করে বলেছেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন না বা তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্তে যাবেন না। ভুল সিদ্ধান্ত আপনার জীবনে আরো বড়ো বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিপেন্ডেন্ট