দেশের কৃষি খাতের সারের চাহিদা মেটাতে ৪টি দেশ থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় বিভিন্ন ধরনের এক লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানি করবে সরকার। এজন্য বাংলাদেশি টাকায় মোট ব্যয় হবে ৪৮০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
আমদানিতব্য সারের মধ্যে রাশিয়া থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন এমওপি সার, তিউনিসিয়া থেকে ২৫ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার এবং সৌদি আরব থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানি করা হবে।
ফসল উৎপাদনে মিউরেট-অব-পটাশ (এমওপি) সার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। দেশের কৃষি উৎপাদনে এমওপি সারের চাহিদা মেটাতে বিএডিসির মাধ্যমে রাশিয়া থেকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় ২০১৩-২০১৪ অর্থবছর থেকে এমওপি সার আমদানি করা হচ্ছে। নিরাপত্তা মজুতসহ বাংলাদেশে এমওপি সারের বাৎসরিক চাহিদা প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বিএডিসি চুক্তির মাধ্যমে প্রায় ৯ লাখ মেট্রিক টন এমওপি সার আমদানি করে। চাহিদার অবশিষ্ট এমওপি সার বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি করা হয়। রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে আমদানি ৯ লাখ এমওপি সারের মধ্যে ৭ লাখ মেট্রিক টন কানাডা থেকে এবং রাশিয়া থেকে আমদানি করা হয় ২ লাখ মেট্রিক টন।
আন্তর্জাতিক বাজার দরে এমওপি সারের দাম নির্ধারণ করা হয় ৩২৭.৭৫ মার্কিন ডলার। সে হিসেবে রাশিয়া থেকে ৩য় লটের ৩০ হাজার মেট্রিক টন এমওপি সার আমদানি করতে ব্যয় হবে ৯৮,৩২,৫০০ মার্কিন ডলার। সোনালী ব্যাংকের ২৩ অক্টোবর বিনিময় হার অনুযায়ী প্রতি মার্কিন ডলার ১১০.৫০ টাকা হিসেবে বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় হবে ১০৮,৬৪,৯১,২৫০ টাকা।
অপর একটি প্রস্তাবে তিউনিশিয়া থেকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় বিএডিসির মাধ্যমে ৩য় লটে ২৫ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানি করা হবে। নিরাপত্তা মজুতসহ বাংলাদেশে টিএসপি সারের বাৎসরিক চাহিদা ৯ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বিএডিসি রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন টিএসপি সার সরবরাহ করে থাকে। তাছাড়া বিসিআইসি প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন টিএসপি সার উৎপাদন করে থাকে। চাহিদার বাকি ৩ লাখ মেট্রিক টন সার বেসরকারি পর্যায়ের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। আমদানির ৫ লাখ মেট্রিক টনের মধ্যে তিউনিশিয়া থেকে ১.৫০ লাখ মেট্রিক টন এবং মরক্কো থেকে ৩.৫০ মেট্রিক টন আনা হয়। তিউনিশিয়ার সঙ্গে চুক্তির আওতায় ২০২৩ সালে ২৫ হাজার মেট্রিক টন করে ৬টি লটে এই সার আমদানি করা হবে। আন্তর্জাতিক নিয়মে প্রতি মেট্রিক টন টিএসপি সারের দাম নির্ধারন করা হয় ৩৮৯.০০ মার্কিন ডলার। সে হিসেবে ২৫ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে ৯৭,২৫,০০০ মা.ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় হবে ১০৭,৪৬,১২,৫০০ টাকা।
সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় আমদানি করা হবে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সারের দাম নির্ধারন করা হয়েছে ৩৯৯.১৭ মার্কিন ডলার। সে হিসেবে ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১,১৯,৭৫.১০০ মার্কিন ডলার। প্রতি ডলারের দাম ১১০.৫০ টাকা হিসেবে ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ১৩২,৩২,৪৮,৫৫০ টাকা।
এছাড়াও সৌদি আরব থেকে আরও ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানি করা হবে। আন্তর্জাতিক বাজার দর অনুযায়ী প্রতি মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সারের দাম নির্ধারন করা হয়েছে ৩৯৯.১৭ মার্কিন ডলার। সে হিসেবে সৌদি আরব থেকে ৩০ হাজার বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানি করতে ব্যয় হবে ১,১৯,৭৫,১০০ মার্কিন ডলার। প্রতি মার্কিন ডলারের দাম ১১০.৫০ টাকা হিসেবে বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় হবে ১৩২,৩২,৪৮,৫৫০ টাকা। অর্থাৎ মোট এক লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানি করতে মোট ব্যয় হবে ৪৮০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
এ সংক্রান্ত ৪টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।