কত কিছুর সুযোগ ছিল। বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলার হাতছানি, নিজেদের একধাপ ওপরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ, পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ও বড় মঞ্চে নিজেদের মেলে ধরার। কিন্তু হাতের মুঠোয় পাওয়া সুযোগ পায়ে ঠেলে বিদায় করেছে নিজেরাই। আরেকটি বাজে বিশ্বকাপ কাটানোর পথে বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপে সেরা আটে থাকতে পারলে ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার সুযোগ মিলবে। ভারতে বিশ্বকাপ অংশগ্রহণের আগে এই খবর পৌঁছে গিয়েছিল বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে। কিন্তু বর্তমানে পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশের যে অবস্থান তাতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা উঠেছে। দশ দলের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ এখন রয়েছে নয় নম্বরে। ৬ ম্যাচে কেবল ১ জয়। হেরেছে ৫টিতে। একই অবস্থা ইংল্যান্ডেরও। গতবারের চ্যাম্পিয়নরা ৬ ম্যাচে ১ জয়ে পয়েন্ট টেবিলের দশ নম্বরে। দুই দলেরই এখন প্রতিযোগিতা পয়েন্ট টেবিলে ওপরে উঠে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলা।
শেষ তিন ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়া। এই তিন ম্যাচে অভাবনীয় পারফরম্যান্স না হলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার সুযোগ মিলবে না। সাকিব অ্যান্ড কোংদের আপাতত লক্ষ্য সেদিকে। বিশ্বকাপে নিজেদের সেমিফাইনালের লক্ষ্য পূরণ হয়নি। হাল না ছেড়ে সাকিবরা এখন নতুন লক্ষ্য বানিয়েছে।
বাংলাদেশের অধিনায়কের মুখেই শুনুন বাকিটা, ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফি একটা লক্ষ্য। সঙ্গে কত উপরে শেষ (বিশ্বকাপ) করতে পারি সেটাও একটা লক্ষ্য। আমরা যেভাবে প্রত্যাশা করেছিলাম সেভাবে করতে পারিনি। এখান থেকেও যে কয়েকটি ম্যাচ আছে সেগুলো যদি ভালোভাবে করতে পারি এবং ফল আমাদের পক্ষে আসে তাহলেও আমরা স্বস্তি নিয়ে ফিরতে পারব। তখন হয়তো হিসেব করতে পারব কি কি করলে আরও ভালো হতো। সেই জায়গা থেকে তিনটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আছে।’
বিশ্বকাপে আসার আগে সাকিব জানিয়ে এসেছিলেন, ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নেবেন। কিন্তু বিশ্বকাপে ভরাডুবিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার সুযোগ না হলে কী করবেন বাংলাদেশের সুপারস্টার? জানতে চাইলে, একটু বিরক্তই মনে হলো তাকে। উত্তরটাও দিলেন সোজাসাপ্টা, ‘টুর্নামেন্ট শুরুর আগে জানতে পেরেছিলাম (চ্যাম্পিয়ন ট্রফির সমীকরণ) । না খেলতে পারলে কি হবে এখনো ভাবিনি।’
ক্রিকেটকে বলা হয় দলীয় খেলা। ব্যক্তিগত সাফল্যগুলো জোড়া লাগলেই সামষ্ঠিগত ফল আসে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার সুযোগ পেতে সাকিব তাকিয়ে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের ওপর। বোলাররা উইকেট নেবে। ব্যাটসম্যানরা রান পাবে। এমনটাই চাওয়া অধিনায়কের। ক্রিকেটারদের নিজেদেরকেই নিজের অনুপ্রাণিত করতে হবে সাফল্যের জন্য এমন বার্তা দিয়েছেন সাকিব।
‘যার যার জায়গা থেকে তাদের নিজেদেকে অনুপ্রাণিত করতে হবে কিভাবে তারা ফর্মে ফিরতে পারে। তারা নিজেরাই পারে নিজেদের ফর্মে ফেরাতে। ব্যাটিং কিংবা বোলিং কিংবা ফিল্ডিং। ক্রিকেট দলগত খেলা হলেও ব্যক্তিগতভাবেও আপনাকে পারফর্ম করতে হয়। তারপরে সমষ্ঠিগতভাবে দল পারফর্ম করে। আমাদের ব্যক্তিগতভাবে পারফর্ম করার দায়িত্ব আছে। কিভাবে নিজেদের অনুপ্রাণিত করবো এবং পারফর্ম করবো। সেটা কেবল আমরাই পারি, আমাদেরই করতে হবে।’
জয় বাদে কোনো পথ খোলা নেই সাকিব তা জানিয়ে রাখলেন, ‘আমার থেকেও দলের বাকিরা আলোচনা করেছে এই মুহূর্তে প্রত্যেকের কি করা প্রয়োজন। এখনও অনেক কিছু করার বাকি। আমাদের জিততে হবে যেন আমরা চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কোয়ালিফাই করতে পারি। এই মুহূর্তে যেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্য। এই লক্ষ্য স্থির করে আমরা পরবর্তী ম্যাচগুলো খেলতে পারি। এজন্য আমাদের জেতা বাদে আর কোনো অপশন নেই। সেদিকেই আমরা তাকিয়ে আছি।’
পেছনের গ্লানি ভুলে সামনে তাকিয়ে বাংলাদেশের অধিনায়ক, ‘খারাপ অনুভব করতে থাকলে তো চলবে না। সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে আমাদের। সবাই সেটা করার চেষ্টা করছে। আমরা একসঙ্গে বসে আলাপ করেছি। ব্যক্তিগতভাবে বসে আলাপ করেছি। যেটা করা সম্ভব। যেটা করলে ভালো কিছু হবে সেটাই করার চেষ্টা করছি।’